উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দুয়ার খ্যাত এই শহরের রয়েছে বিশেষ সুনাম । শুধু ইতিহাস নয়, ভ্রমনকারীদের জন্যেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান, ভোজন রসিকদের স্বর্গরাজ্য, কীর্তিমান সূর্য সন্তানদের জন্মভূমি যাদের কারণে বগুড়া আজ বিশ্ব দরবারে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আসুন তাহলে একনজরে দেখে নেই –ঐতিহ্য ও গৌরবের নগরীতে যা কিছু বিখ্যাত – বগুড়া।
বিখ্যাত ব্যক্তি: উল্লেখযোগ্য কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যাদের কৃত্বিতের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো :মোহাম্মদ আলী, সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, হাবিবুর রহমান (বুলু মিঞা), রজিব উদ্দীন তরফদার, ফজলুল বারী, ডাঃ হাবিবুর রহমান, আব্দুল বারী বি, এল, ওয়াজেদ হোসেন তরফদার, আজিজুল হক, কবিরাজ শেখ আব্দুল আজিজ, এ,কে মুজিবর রহমান, বেগম মাহমুদা সাদেক, ডাঃ মহম্মদ ইয়াছিন, ডাঃ ননী গোপাল দেবদাস, ডাক্তার টি, আহম্মদ, ডাক্তার এস.আই.এম গোলাম মান্নান, কলিম উদ্দীন আহম্মদ, মজিবর রহমান, গাজীউল হক, অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন, অধ্যাপক এ.কে.এম নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক এ.কে আজাদ, কে এম শমসের আলী, এম. শামছুল হক, তাজমিলুর রহমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ওস্তাদ আলা উদ্দীন সরকার, বেদার উদ্দীন আহম্মদ, আঞ্জুমানআরা বেগম, খুরশীদ আলম, আজিজুল জলিল (পাশা), প্রফুল্ল চাকী, খাদেমুল বাশার, বীর উত্তম, এম. আর. আখতার মুকুল, মুশফিকুর রহিম, রোমেনা আফাজ।
বগুড়ার দই: ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী এর ইতিাস প্রায় ১৫০ বছর আগের । পরবর্তীতে নবাব আলতাফ আলী চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতায় বগুড়ায় দই এর উৎপাদন শুরু হয় যার নেতৃত্ব দেন তৎকালীন শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল ।
বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। এছাড়াও বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে অনেকেই খেয়েছেন যা বগুড়ার জন্য গর্বের বিষয়।
দৈনিক প্রায় তিন মিলিয়ন টাকার বিকিকিনি হয় দই এর বাজারে । যদিও দই বিক্রেতার সংখ্যা অসংখ্য তা সত্বেও কিছু কিছু দোকান আছে যেগুলোর দই গুণে মানে ও বৈশিষ্ট্যে অনন্য । যেমন এশিয়া, বগুড়া দই ঘর, শ্যামলী, আকবরীয়া, সাউদিয়া, শম্পা দধি ভান্ডার, মিষ্টি মহল, মহররম আলী দই ঘর, চিনিপাতা দই, দই বাজার ইত্যাদি।
দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র: ১৯৯৫ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র । ৩২ লাখ মেট্রিক টন চাদিার বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১৮ লাখ মেট্রিক টন । এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র ।
এ পর্যন্ত প্রায় ১৭ প্রকার মসলা নিয়ে গবেষণা চলছে যার মধ্যে পেয়াজের নতুন জাত উদ্ভাবন, দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতার চাষ পদ্ধতি নিয়েও কাজ চলছে। এই কেন্দ্রের আয়তন প্রায় ২৮ হেক্টর যার মধ্যে ১৮ হেক্টর জমিতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় । ৩টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৭টি উপকেন্দ্র নিয়ে ৩০ টির বেশি দেশি বিদেশী মসলার উপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।
তাতঁ শিল্পের বিখ্যাত: বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার অর্ধশত গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা বস্ত্র কারখানা এখন সুতা ও তাঁতশিল্পে বিখ্যাত এলাকা নামে পরিচিত। আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুরের শাঁওইল গ্রামের কম্বলপল্লীর হাটে সপ্তাহে দু’দিন রোববার ও বুধবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে একটানা বেচাকেনা।
পুরাতন কাপড় থেকে সুতা সংগ্রহ, বাছাই এবং কম্বল ও চাদর তৈরির পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ১০ হাজার নারী-পুরুষ সম্পৃক্ত। শীত মৌসুমে এখানকার প্রতি হাটে অন্তত ২ কোটি টাকার শীতবস্ত্র বেচাকেনার ধুমপড়ে যায়। সে হিসাবে শীত মৌসুমের ৪ মাসে তা ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বিখ্যাত স্থান: ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়, জিয়ত কূপ, মহাস্থান যাদুঘর, বেহুলার বাসর ঘর (গোকুল মেধ), সারিয়াকান্দি প্রেম যমুনার ঘাট, ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক, মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম, সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার, খেরুয়া মসজিদ, করোতোয়া নদী, সরকারী আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আরো অনেক কিছু।
বগুড়ার বিখ্যাত চাপ এবং কাবাব: ৭ মাথা মোড় থেকে কলোনি যাবার জন্য অটো এবং রিক্সা পাওয়া যায়। অটো ভাড়া ৫ টাকা করে প্রতি জন আর রিক্সায় কলোনী পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়া। রিক্সা/অটো ওয়ালাকে বললে একেবারে চাপের দোকানের সামনেই নামিয়ে দিবে।দোকানটি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মাত্র ৫ ঘন্টার জন্য খোলা থাকে। দিনের অন্য সময় দোকান বন্ধ থাকে।
বগুড়ার ভৌগোলিক পণ্য মরিচ: স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার পরেও প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে । মরিচ উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া এলাকার মরিচকে বিশেষত্ব দান করেছে । যে কারণে বগুড়ার কৃষি বিভাগ মরিচকে বগুড়ার ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মহাস্থান গড়ের কটকটি: মহাস্থান যাবেন অথচ কটকটি খাবেন না তা কি হয় ? বগুড়ার দই এবং মরিচ এর পরে যদি কোন জনপ্রিয় বা ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম মুখে আসে তা হতে হবে কটকটি । এই সুস্বাদু খাদ্যটি ৯৯.৯৯ শতাংশই তৈরি হয় বগুড়ায় ।
আকবরিয়া হোটেল: আকবরিয়া হোটেল কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই । শতবর্ষের ঐতিহ্য ও গৌরবান্বিত ইতিহাস নিয়ে আজো মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে ্ বগুড়া শহরের থানা রোডে । বর্তমানে জনপ্রিয় এই হোটেলের রয়েছে ৪টি শাখা । আকবর আলীর লাচ্ছা সেমাই এখন বিদেশের বাজারেও রফতানি হয় ।
বগুড়ার চিকন সেমাই: দেশজুড়ে আছে যার খ্যাতি। আর ঈদের খাবারের মেন্যুতে বগুড়ার চিকন সেমাই ভিন্ন স্বাদের মাত্রা যোগ করে । আর যে কারণে ঈদ এলেই বেড়ে যায় বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের চাহিদা। চিকন সেমাই গ্রাম হিসেবে পরিচিতি বেজোরার সেমাইপল্লী।